Call For Order : 01305546213
Sign In

কিডনি রোগী এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ, চিকিৎসার খরচ এতো বেশি কেন

Published on : 23-Oct-2023 08:10 PM

বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে দেখা গেছে এক বছরের ব্যবধানে কিডনি রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। এই রোগীদের ৮০% তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে পারছেন না। এর মূল কারণ কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল।

বিশেষ করে ডায়ালিসিসের খরচ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভুক্তভোগী রোগীরা বলছেন দীর্ঘমেয়াদে এই খরচ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই।

এ কারণে অনেক রোগী মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন যা তার জন্য বয়ে আনছে নিদারুণ কষ্ট এবং অকাল মৃত্যু।

জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৭% বা দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর এই রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে সেটা স্পষ্ট।

 

অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০২১ সালের তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার রোগী। ২০২২ সালে এই রোগী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ হাজারেও বেশি।

আবার মৃত্যুহারও বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০২১ সালে মারা গিয়েছেন ৫৪১ জন, ২০২২ এ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০২৭ জন।

এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালের। এর বাইরে বেসরকারি হাসপাতালেও অসংখ্য রোগী চিকিৎসা করাচ্ছেন।

জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট বলছে দেশজুড়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ভেজাল খাদ্যগ্রহণ, ধূমপান, সেইসাথে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক সেবনের কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলছে।

প্রতিবছর রোগী বাড়লেও সে হারে সেবার পরিধি সেভাবে বাড়ছে না। সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে আছেন প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষেরা।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের সাত মাস আগে কিডনি রোগ ধরা পড়ে। ততক্ষণে তার দুটো কিডনি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন প্রতি সপ্তাহে তাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর যাওয়া আসা করতে হয়।

“আমার চিকিৎসায় রংপুর যাওয়া লাগে। যাইতে আসতে তিনশ টাকা ভাড়া, এর পরে ইনজেকশন, টেস্ট, ওষুধ মিলায় প্রত্যেক সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত হাজার খরচ যায়। আমি গরিব মানুষ, এতো টাকা কই পাবো। নিজের সব জমি বিক্রি করে দিসি, এখন আমার কিছু নেই। বিছানায় পড়ে যেতে হবে,” আক্ষেপের সুরে বলেন ৩৮ বছর বয়সী এই নারী।

আরও পড়তে পারেন
 
ছবির ক্যাপশান,

চিকিৎসা সেবামূলক না করে ক্রমেই বাণিজ্যিক হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ

খরচ বেড়েছে তিন গুনের বেশি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ ধরা পড়লে ওষুধ ও নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে আগে অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

তবে কিডনি যদি অকেজো হয়ে যায় তাহলে কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালিসিস ছাড়া বাঁচার উপায় থাকে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালিসিসের ভর্তুকি প্রত্যাহারের পর সেখানে প্রতিবাদের ঘটনাও ঘটেছে।

ওই হাসপাতালে কিডনি রোগীরা প্রতি মাসে ৮টি ডায়ালিসিসের সেশন ভর্তুকি মূল্যে করাতে পারতেন। প্রতিটি সেশনের প্রকৃত মূল্য ২৯৩৫ টাকা। ভর্তুকির পর দিতে হয় ৫৩৫ টাকার মতো।

তবে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে ৮টি সেশনের মধ্যে ৪টি সেশন রোগীদের সম্পূর্ণ ফি-তে করতে হচ্ছে।

ফলে আগে যেখানে মাসে ৮টি ডায়ালিসিসের জন্য একজন রোগীর খরচ হতো ৪২৮০ টাকা এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ টাকা। অর্থাৎ তিন গুনেরও বেশি।

ডায়ালিসিসের খরচের সাথে ডাক্তারের ভিজিট ফি, বেড ভাড়া, যাতায়াত, খাবার, টেস্টের খরচ, ওষুধপত্র, ইনজেকশন ইত্যাদি বাড়তি খরচও যুক্ত হয়।

আবার কিডনি রোগীর ডায়ালিসিস চলাকালে যেকোনো মুহূর্তে আইসিইউ বা অক্সিজেন নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেটারও বড় ধরনের খরচ রয়েছে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ডায়ালিসিস-নির্ভর রোগীদের মাসে গড়ে খরচ সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায় যা অনেকের পক্ষেই যোগাড় করা সম্ভব নয়।

বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হলে খরচ আরও বেশি হয়।

একজন ক্রনিক কিডনি রোগীর সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ডায়ালিসিস করা তার বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক।

খরচ বেড়ে গেলে বেশিরভাগ রোগীর পক্ষেই এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

এ কারণে ৮০ ভাগ রোগী ডায়ালিসিস চালিয়ে নিতে পারেন না বলে জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিডনি দাতার সঙ্কট যেমন প্রকট তেমনি আইনি জটিলতাও রয়েছে। নেফ্রোলজি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের নেফ্রোলজি ইন বাংলাদেশ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কিডনি বিকল রোগীদের মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান।

আবার এই চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে ধনী থেকে গরিব হয়ে যাওয়ার উদাহরণও কম নয়।

বেশিরভাগই সারা জীবনের সঞ্চিত সম্পদ, ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে নাহলে ধারদেনা করে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন।

এভাবে একজন কিডনি রোগীর সাথে তার পরিবারেরও অর্থনৈতিক ও সামাজিক মৃত্যু ঘটে বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

 
ছবির ক্যাপশান,

ডায়ালিসিস না করালে তা রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে

More Blogs


ঢাকার নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জন্ম থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্র...

ঢাকার সেরা নিউরো সার্জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা

ঢাকার সেরা নিউরো সার্জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা

কিডনি রোগী এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ, চিকিৎসার খরচ এতো বেশি...

বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে দেখা গেছে এক বছরের ব্যবধানে কিডনি রোগীর সংখ্যা দ্বি...

কোন রোগে কোন চিকিৎসক?

কোন রোগে কোন চিকিৎসক? পেটে ব্যথা আর পায়ের ব্যথার চিকিৎসক আলাদা। কোন রোগের...